সোমেন প্রসঙ্গে

সোমেন চন্দের কোন গল্পটা পড়ে আমি পয়লাবার আপ্লুত হই? স্বপ্ন?

একটি গ্রাম্য লোকের মৃত্যুস্বপ্ন সংক্রান্ত কাহিনী।

মেনে নেই যে এ লেখক কী অসম্ভব সম্ভাবনা নিয়েই না এসেছিলেন ঢাকা নগরির বুকে, আধুনিকতা, গতি কিংবা জীবন দর্শন—সবকিছুতেই সোমেন ছিলেন বিস্ময়।

স্পেনের গৃহযুদ্ধে (১৯৩৬- ১৯৩৯) যখন সে দেশের মাটি ভিজে যাচ্ছে গার্সিয়া লোরকা, র‍্যালফ ফক্স কিংবা কডওয়েলদের তরুণ রক্তে, কিশোর সোমেন তখন যেন তাদের বিপ্লবের উত্তরসূরি হয়ে উড়ে বেড়াচ্ছেন পূর্ববাংলার পথঘাট, বিস্তর সাহিত্য পড়ছেন, দীক্ষা নিচ্ছেন মার্ক্সবাদে।

মাত্র একুশেই দু’বাংলায় সোমেন তখন আলোচিত প্রতিভা।

বন্যা নামে একটা উপন্যাসও লিখে ফেলেছেন ১৭ কিংবা ১৮ বছর বয়সে।

শ্রমজীবী মানুষের মাঝে উদ্দীপনা আনতে হবে, সে বিশ্বাসে বিস্তর অংশও নিচ্ছেন মিছিল মিটিঙে।

রেলশ্রমিকদের একটি মিছিলে ১৯৪২ সনের আজকের এই দিনে ধুপ করেই তিনি খুন হন ফ্যাসিস্টদের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের হাতে।

আচ্ছা সময়টা কি এই দুপুরের মতই মেঘলা ছিল? সুত্রাপুরের পথঘাটে ছিল গমগমে মানুষের কন্ঠস্বর ও বিষণ্ণতা?

ঠিক বছরখানেক পর কোলকাতার পরিচয় পত্রিকায় যখন ইঁদুর গল্পটা ছাপা হয় প্রথমবারের মত, তখন বাঙ্গালী পাঠকের বিস্ময় রূপ নেয় বেদনায়, সোমেন হয়ে দাঁড়ান কিংবদন্তি।

লোকটা যে বয়সে মারা যান, সে বয়সটাতে আমি নিজেও বিস্তর লিখতে শুরু করেছি, যতনা প্রকাশ্যে, তারচে’ বেশি গোপনে।

মনে হত, ধুপ করে একদিন অমন মরে গেলে? বিশে লিখে ফেলা একমাত্র উপন্যাসটির পান্ডুলিপি আমি মরবার পর আবিষ্কার হলে?

ঐ বয়সের আবেগে সোমেনকে চিনেছিলাম—প্রথমত সেলিনা হোসেনের নিরন্তর ঘন্টাধ্বনিতে, এরপর আজিজ, নীলক্ষেত কিংবা কাঁটাবন কনকর্ডে তার রচনাবলি খুঁজে বেড়াবার অদ্ভূত দিনগুলোয়।

জীবন আজ এমন কঠিনতরো, সময় দৌড়ুচ্ছে, হৃদয় হয়ে উঠছে পাথুরে তবু অবাক হই, সোমেন আমার কাছে আজও একইরকম রয়ে গেছেন—এই থাকাটুকু স্থায়ী হোক।

মন্তব্য জানাতে আপনার সোশাল মিডিয়া একাউন্ট অথবা ইমেইল ব্যবহার করুন