বিজ্ঞান নিয়ে একটা পপুলার অপিনিয়ন আছে দেখবেন যে, বিজ্ঞানও একটা রিলিজিয়ন।
ইউরোপে গ্যালিলেও যখন বলেছিলেন “সূর্য নয়, পৃথিবীই সূর্যের চারধারে ঘোরে”, ক্যাথলিক চার্চ কিন্তু এই কারণে তারে অভিযুক্ত করেনাই যে উনি ধর্মের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন।
আমার ধারণা, গ্যালিলিওর মতাদর্শকে অর্থাৎ বিজ্ঞানকে চার্চ বরং ধরে নিয়েছিল নতুন একটা ধর্ম হিসেবে।
যেই ধর্ম তাদের অস্তিত্বকে হুমকির মুখে ফেলবে। জনগণ চার্চের প্রতি আস্থা হারালে চার্চের ব্যবসায়িক ক্ষতি অনিবার্য্য ছিল।
এখন এই বিষয় নিয়ে কিছু কথা আগেও বলেছি। এখনও বলি।
বিজ্ঞান আসলে ধ্রুব পবিত্র কোন বস্তু না। অনড় অবিচল কোন এনটিটিও না।
বিজ্ঞান মোটামুটি স্ববিরোধী বিষয়। সকালে বিজ্ঞান যাকে বাস্তবতা হিসেবে দেখে, বিকেলে এসে ঐ বস্তুকে অবাস্তব হিসেবে দেখতে পারে।
স্ববিরোধ মানুষের বৈশিষ্ট্য। এটা দার্শনিক ঘটনাও। রিলিজিয়ন ও ধর্মীয় নেতাদের জীবনেও দেখবেন যে অনেক স্ববিরোধ আছে।
বিজ্ঞানের স্ববিরোধটা আমাদের চেনা স্ববিরোধের চেয়ে আলাদা কেন?
কারণ শুধু বাণী দিয়ে বা চিন্তা প্রক্রিয়ার যুক্তি দিয়ে এইখানে কেউ দিনকে রাত রাতকে দিন দাবি করতে পারেনা।
বিজ্ঞানে আপনি যাই বলেন না কেন, আপনাকে বলতে হবে প্রমাণ সাপেক্ষে। এবং ক্রিস্টাল ক্লিয়ার হতে হবে সেইসব প্রমাণ।
বিজ্ঞানে বিশ্বাসের কোন যায়গা নেই। তবে কল্পনার যায়গা আছে। যেমন ধরেন হাইপোথেটিকাল ফিজিক্স বা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের ঘটনাগুলো।
স্টিফেন হকিংস হাইপোথেটিকাল ফিজিক্সের গুরুস্থানীয়। উনি আলোকবর্ষ, ব্ল্যাকহোল বা অসীম জগত (প্রায় প্যারালাল ইউনিভার্স) এইগুলা নিয়ে অসম্ভব সব কল্পনা করেছেন।
তার কল্পনার স্বপক্ষে অনেক রকম গাণিতিক যুক্তি ও থিউরি দিয়েছেন। কিন্তু এগুলো থিউরিই।
বিজ্ঞানের রাস্তা হচ্ছে কল্পনার সাথে যুক্তি মিলিয়ে রাস্তা নির্মাণ করতে থাকা। সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রাখা। একদিন সম্ভাবনা বাস্তবে পরিণত হলেও হতে পারে। এই আশাবাদ রাখা।
আবার আছে এক্সপেরিমেন্টাল ফিজিক্স। যা বাস্তব ঘটনাবলি ও বাস্তব প্রমাণ এবং পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে কাজ করে।
মূল কথায় আসি। বিজ্ঞান কি রিলিজিয়ন? ব্যবহারিক দিক দিয়ে চিন্তা করে দেখেন।
বিজ্ঞান কোন জীবন বিধান না। আপনারে কোন অপরিবর্তনীয় নিয়ম কানুন মানতে হয়না। একজন গবেষক নিজের মত নিয়ম কানুন বানাইয়া নিতে পারেন।
বিজ্ঞানে স্বর্গ নরক নেই। তর্কের খাতিরে আপনি দুনিয়ারে স্বর্গ নরক বানিয়ে অনেক কথা বলতে পারেন।
তাও দেখবেন যে, বিজ্ঞানে এক রকমের কাজ করলে স্বর্গ আরেক রকমের কাজ করলে জাহান্নাম – এই রকম নির্দিষ্ট কিছু নেই।
অর্থাৎ বিজ্ঞান পরিবর্তনশীল, আপেক্ষিক, উন্মুক্ত। এবং এর কোন শেষ কথা বলে কিছু নাই।
ধর্ম তা নয়। ধর্ম চূড়ান্ত, নিশ্চিত।
বিজ্ঞান এইসব কারণে চাইলেও রিলিজিয়ন হতে পারবেনা আরকি।
গ্যালিলেওর কথা দিয়ে লেখাটা শেষ করি। বিজ্ঞানকে আরও একটা রিলিজিয়ন হিসেবে দেখতে পারা ও প্রচার করা ঐ চার্চীয় মনোভাবের উত্তরাধিকার হয়ে থাকবে।
এটা বকধার্মিক ও ধর্মকারবারিদের অস্তিত্ব সংকটের একটা ঘটনা।
ধার্মিক লোকের বিজ্ঞানের সাথে কোন সংযোগ যদিও থাকে (প্রযুক্তিগত), বিরোধ বা তেমন নেই মনে হয়।
উদাহরণ স্বরূপ আমার দাদি বা নানা ভাইয়ের কথা বলি।
দাদি ধার্মিক মহিলা ছিলেন। বিজ্ঞান বিষয়ে তার ধারণা ছিল শূন্য। এই জিনিস কোনদিন চিন্তা করার দরকার ভাবেন নাই। একটা নির্ঝঞ্ছাট জীবন কাটিয়ে গেছেন।
আমার নানা ভাই চূড়ান্ত রকমের ধার্মিক মানুষ ছিলেন। তার তাক ভরা ধর্মীয় বইপত্রের পাশাপাশি বিজ্ঞানের বইপত্রও ছিল। ডিসকভারি আর ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলে দিনের অনেকটা সময় কাটাতেন। সায়েন্স ফিকশন ভালবাসতেন। পড়তে ও দেখতে। মানুষের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক উন্নতি আর দুর্ঘটনায় শিশুর মত আনন্দ ও দুঃখ পেতেন।