প্রকাশনার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
উপন্যাসটির খসড়া তৈরি হয়েছিল ২০১০ সালের এপ্রিলে – টানা এক মাস ধরে। এরপর হাতে লেখা পাণ্ডুলিপি থেকে ‘কোলাহলে’ নতুন আকার পায় পাঁচ বছর পর। ২০১৫ সালে বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক আয়োজনে ‘নির্বাচিত তরুণের উপন্যাস’ হিসেবে পুরষ্কৃত হয় এর পাণ্ডুলিপি। ঐ বছর পত্রিকাটির বর্ষপূর্তি বিশেষ সংখ্যায় উপন্যাসটি প্রকাশ করে তারা। বই হিসেবে ‘কোলাহলে’ প্রকাশিত হয় ঘাসফুল থেকে – ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি, অমর একুশে বইমেলায়। কোলাহলের পরিবর্ধিত দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশ করে আদী প্রকাশন ২০১৭ সালের অমর একুশে বইমেলায়।
উপন্যাসের একটি অংশ
ভবানী শাহের গানের আসরে বহু লোক হয়। বটতলার চারদিক ঘিরে তারা পেতে রাখা চটের ছালায় বসে থাকে। পূর্ণিমা রাত হলে আলোয় ভেসে যায় চরাচর, অদূরের নদীতে চাঁদের আলো গলগল করে রূপোর স্রোত ঢালতে থাকে।
এ ছাড়া বড় লম্পো জ্বলে বেশির ভাগ সময়, বাউলা গানের এ দলটি বিদ্যুতের ঘোর বিরোধী কিংবা হয়ত দিনের আলোরও। ফ্লুয়োরসেন্টে তাদের পোষায় না।
আজ অন্য রাত্তিরের চেয়ে বেশি লোক হয়েছে। গাঁজা আর তামাক পোড়া গন্ধে মশগুল বাতাসে জাহাঙ্গির এসে থামে। প্রাইমারি স্কুলের নতুন বিল্ডিং হবে, সে লক্ষ্যে আনা পাঁজা পাঁজা ইটে বটতলার একটা কোণা ভরে আছে, ওগুলোর উপরে পা ঝুলিয়ে সে বসে পড়ে।
তবলা আর একতারা বাজছে, তার ভাঁজে ভাঁজে ভবানী শাহের কন্ঠ, সকলে দুলে দুলে তাল দেয় যেন, কল্কি ঘুরতে থাকে এক হাত থেকে অন্য হাতে। কেরোসিন লম্পোর ধুকধুকে আলো-আঁধারে জাহাঙ্গির দেখতে পায় না আসরের সামনের দিকে মাথা গোঁজ করে বসে আছে কামরুল—হয়ত সে উদাস হয়ে গান শোনে কিংবা ভাবে, আসছে বর্ষায় কোথা নিয়ে যাবে জীবন তাকে?
ভবানী শাহের কন্ঠে দাউদাউ করে জ্বলে ওঠে বিচ্ছেদির নিদারুণ লাইনগুলো। রাত্তিরের আঁধার কাটে আর যেন ফালি ফালি হয় মানুষের মনভূমি—সেসব মনের ময়দানে হয়ত বোশেখের খরতাপ, খরার অনাবৃষ্টি, শৈত্যের হিমবাহ, উপশম নেই কিছুর।
হৃদয়ের যে মোছে না রকমের বেদনা সে নিশ্চয় স্মৃতির বেদনা, অপ্রাপ্তির বেদনা; স্মৃতির কষ্ট বড় কষ্ট। মানুষের দেহ তো শুধু প্রাপ্তির যন্ত্রণা ভোগ করে, অপ্রাপ্তির যন্ত্রণা আত্মার জন্য।
কামরুল কিংবা জাহাঙ্গির এত সব কেন বুঝবে কিংবা এই যে ঝিমুতে থাকা দুলে দুলে—এতসব মাটির কাছাকাছি মানুষ, এদের দায় কিসের বুঝে উঠবার? ভবানী শাহের কন্ঠ এদের অন্তরে শুধু হু হু করা এক উদাসিনতা তৈরি করে, হয়ত অজস্র ডালপালা বিস্তার করা বটগাছটিরও দুঃখ জাগে –
“যদি রে প্রাণ তোর ধার খাইয়া থাকি
দেও দুঃখ যা আছে বাকি
দুঃখের দশা এ দুর্দশা দুঃখের বাকি আছে বা কী
পতিত জানি অন্ধকূপে জন্মে জন্মে দিলায় ফাঁকি”
উপন্যাস প্রসঙ্গে পাঠকের মতামত
গ্রাম্য পরিবেশ, সংস্কার-কুসংস্কার, আচার-ব্যবহার আর কাদামাটি মাখানো গেঁও ভাষা কার না ভালো লাগে? আমারতো দারুণ লাগে। এধরণের রচনাগুলো যেন আত্মার কথা বলে। কোলাহলে ঠিক তেমনই একটি উপন্যাস। গ্রাম্য কুসংস্কারের অংশ হিসেবে ভৌতিক পরিবেশ তৈরী করে রহস্যময় খুনকে সামনে আনা হয়। শিরবিহীন সেই ঝুলন্ত লাশ ভয় পাইয়ে দেয় ভূতে বিশ্বাস করা বাবা ছেলেকে। তারপরে একে একে চরিত্রগুলোর আত্মপ্রকাশ। এমনকি গল্পের একেবারে শেষ মুহূর্তেও নতুন চরিত্রের আবির্ভাব। এজন্যই বোধয় গল্পের নাম কোলাহলে। গ্রামীণ মানুষেদের জীবনাচার বর্ণনার মধ্যে দিয়ে মু্ন্ডুহীন লাশ এবং খুনির পরিচয় উদ্ধার করার চেষ্টা করা হয়েছে। অকৃত্রিম ভালোবাসা নিয়েও দুটো মানুষের আলাদা থেকে বাস্তবতার সাফাই গাওয়ার নিষ্ঠুরতার কথা বলা আছে এখানে। লেখক খুব সুন্দর করে ক্যারেক্টার বিল্ড আপ করেছেন। খুব সূক্ষ্মভাবে ভাবনার উপাদান যোগ করেছেন, একে একে রহস্য যোগ করেছেন আবার সমাধান করেছেন। বইটি থ্রিলিং না হলেও মজিয়ে রাখার মতো। আর এমনভাবে শেষ করা হয়েছে যে মনে হবে আরো অনেক কিছু জানা বাকি। এ যেন শেষ হয়েও হলোনা শেষ।
আসিফুল হক
গল্পের শুরু এবং শেষ দুটোই হঠাৎ করে। চলমান জীবনের এক পর্যায়ে শুরু এবং তার কিছু দিনাতিপাতের পর শেষ। চরিত্রগুলোর পূর্ব বর্ণনা খুব বেশী না থাকলেও এটুকু ক্যনভাসেই লেখক মুন্সিয়ানার ছাপ দেখিয়েছেন নি:সন্দেহে। পড়ার সময় ঘটনাগুলো যেন জীবন্ত হয়ে ভাসছিলো আমার সামনে।
— সালমান হক
আমার কাছে এই উপন্যাস এর দশ বছর বয়সী মনি চরিত্রটি সবচেয়ে ভালো লেগেছে। মনির শিশু জাগতিক মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টি লেখক যেভাবে এঁকেছে তা সত্যিই অসাধারণ। মন এমন এক রহস্যময় ব্যাপার সেখানে আসলে কোনো হিসেবেনিকেশ চলে না। জাগতিক কারণের চেয়েও মানসিক ব্যথা, অজানা কষ্টের দলা পাকিয়ে থাকা যার ব্যাখ্যা হয় না, চোখ জ্বালাপোড়া করে ওঠা অথবা সব থেকেও কিছুই নেই এই অনুভূতির কুড়ে কুড়ে খাওয়া এসব চরিত্রের চিত্রায়ন এখানে দেখানো হয়েছে।
— অপর্ণা মম্ময়
গত ছয়মাসে রমাপদ আর মঞ্জু সরকার বাদ দিলে, আমার পড়া সেরা উপন্যাস। পৃথিবীতে ১৫০ টাকায় মনে হয় বাংলা ভাষাতেই এতো কম দামে, অসাধারণ বইগুলো পাওয়া যায়। লেখকের খুলনা আর আমার চাঁদপুর যেন কোথায় মিলেমিশে একাকার। দূর্দান্ত কাহিনী, চরিত্র, রহস্য ও মানবিকবোধ দিয়ে উদ্ভাসিত উপন্যাস “কোলাহলে”। রমাপদ চৌধুরীর কথা মেনে নিলে বলতেই হয়, লেখায় লেখক যতই কৌশলী হোক না কেন, বহু বছর পর পাঠকের একান্ত মনে কেবল কাহিনী বা ঘটনার ছাপই থেকে যায়, তাই উপন্যাস এর হয়ে ওঠা তার গল্পেই অনেকটা ভর করে, তাইতো এতো বছর পরও আমরা ঈশপ থেকে চেখবকে মনে রাখি। “কোলাহলে” তেমনই একটা উপন্যাস।
— সীমান্ত মুরাদ
কোলাহলে পড়তে পড়তে বারবার খোয়াবনামার কথা মনে পড়ে যাচ্ছিল। খোয়াবনামা পড়ার সময় যে আবহে ঢুকে পড়েছিলাম ক্রমশ ঠিক সেই আবহটা পাচ্ছিলাম। চিরন্তন জীবন-যাপনের উৎসব শব্দে এঁকে নিয়েছেন লেখক। কোন জীবন সমাধান দেয়া লেখকের কাজ নয়, সেই চেষ্টাও লেখক করেননি। লেখক যাপিত জীবনের রূপ নিজ ভাষায় তুলে এনেছেন।
— আখতার মাহমুদ
পড়া শেষ করলাম। চমৎকার! গোগ্রাসে গিললুম। তবে একটা অভিযোগ আগে থেকে করি, আরো বড় করা উচিত ছিল। মনে হচ্ছিল অনেক বড় একটা উপন্যাসের কাহিনী সংক্ষেপ পড়ছি। তবে একটা ফ্লো ছিল পুরোটা জুড়ে তাই টানা পড়ে যেতে পেরেছি।
— জাকারিয়া হোসাইন অনিমেষ
‘কোলাহলে’ শেষ হলো গতকাল সন্ধের পরপর। হতাশ হবো না জানতাম, হইও নি। একটু অতৃপ্তি- লেখক গল্প বলে যেতে পারতেন আরও কিছুক্ষণ। টুকরো টুকরো গল্পদের একসাথে গেঁথে চলার গল্প একটু তাড়াহুড়ো করেই যেন শেষ করে দেয়া হয়েছে।
— মোঃ খালিদ রহমান
সবচেয়ে ভাল যেটা লেগেছে সেটা হল ঘটনার পরম্পরা ঠিক ছিল। ভুল-ভ্রান্তি তেমন হয়নি। চরিত্রগুলো আরও বিকশিত করলে আরও ভালো লাগত আমার, সেক্ষেত্রে উপন্যাসটা হয়ত আরেকটু বড় হত।
— রেজওয়ান তানিম
গ্রামীণ মানুষের ভয়, দুঃখ, হাসি, কান্না সব খুব নান্দনিকতার সাথে চলে এসেছে। সবচেয়ে ভালো লেগেছে ঘটনা বলার সহজ শৈলিতা। সিনেমার পর্দায় দেখার মতো চলে আসছে এক একটি চরিত্র। এখানে কোন জ্ঞানের বাণী নেই। চরিত্রের পরিনতি হচ্ছে এক একটি দর্শন। হুমায়ূন আহমেদ স্যারের পর এই গুণ আবার পেলাম নিখুঁত শৈল্পিক কারুকাজে ‘কোলাহলে’ উপন্যাসে।
— বলরাম রায় দ্বীপ
গ্রামীণ পটভূমিতে লেখা এই উপন্যাসে গ্রাম্যতাকে লেখক যেভাবে চিত্রিত করেছেন, অর্থাৎ এই উপন্যাসের চরিত্র, ভাষা, সংলাপের ব্যবহার, আবহ ইত্যাদি সবকিছুই এই উপন্যাসকে বিশিষ্টতা দান করেছে ।
— ইসমাইল হামিম
কিন্তু যখন একটি অঞ্চল, একটি জনপদ- তাদের ছোট ছোট গল্প আর সেই গল্পের ভেতরেই জীবন আর জীবনের ভেতরে বিষাদ ভর করে, পাতায় পাতায় বিষাদ আর সুখের পেছনে ছোটা মানুষগুলোর স্বপ্নভঙ্গের, প্রতারণার, কুসংস্কারের একটা একটা করে মোড়ক উন্মোচন হয়- তখন উপন্যাসের ভেতর ডুবে থাকা ছাড়া আর তেমন কোনও উপায় থাকে না। কলেবরে ছোট, অর্ন্তগত তাৎপর্যে বড় এবং সেদিক দিয়ে এটি উপন্যাসিকা না হয়ে উপন্যাস। লেখকের নিজের চোখে দেখা জীবন, গ্রামের প্রান্তিক মানুষ, সংলাপ ও ভাষা আড়ম্বরহীন। গল্পটা অসাধারণ হয়ে উঠতে চায় নাই কখনোই, এমনকি থাকতে চেয়েছে সাধারণের চেয়ে সাধারণ।
— মাহবুব ময়ূখ রিশাদ
কোলাহলে এক নিশ্বাসেই পড়ে শেষ করলাম আজ। আমার সবচেয়ে ভাল লেগেছে যে বিষয়টি সেটি হল, অনেক অনেক বড় বড় উপন্যাস এই যেমন পদ্মা নদীর মাঝি, মানবজমিন, গৃহদাহ পড়ার পর চরিত্রগুলো এখনো মাথায় ঘুরঘুর করে, তেমনি কোলাহলের কামরুল, রোকেয়া, আজমত সহজে মাথা থেকে যাবেনা। মোট কথায় আমি বিশাল সাইজের ভাল উপন্যাসের স্বাদ কোলাহলে এ পেয়েছি।
— রবি মোহাম্মদ রফিক
ছোট্ট ক্যানভাসে অসংখ্য সুশ্রী জীবন্ত রং, তার মধ্যে দর্শনের কমল মাইনর নোট। অসাধারণ সহজ শ্রুতি মধুর গল্প সঙ্গীত।
— ইসমাইল হোসেন
কোলাহলে উপন্যাসটা পড়েছি। খুব ভালো লেগেছে। তবে, পরিসরটা আরো বড় হলে ভালো হত। তবুও, খুব ভালো লেগেছে।
— সারোয়ার রাফি
কোলাহলের স্টার্টিংটাই চমকজাগানিয়া। এর প্রথমেই,একটা লাশের দেখা পাওয়া যেন পুরো গল্পেরই প্রতীক। পুরো গল্পেই তো চরিত্রগুলারে নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাইতে দেখছি। পার্থক্য হইল জীবিত আর মৃত লাশের। এ স্টার্টিং এর মাধ্যমে লেখক একটা ভয়, শঙ্কা আনছেন, আবার লোকায়ত বিশ্বাসের ব্যাপারটাও ধরছেন। এদিক দিয়ে উপন্যাস সহজেই আগ্রহ দাবি করে।
— তাসনিম রিফাত
এনামুল রেজার উপন্যাস কোলাহলে পড়লাম। আশ্চর্য প্রাঞ্জল তার লেখা। আপ-ডাউন বাসে বসেই পুরোটা শেষ করলাম। আকারে ছোট হলেও চরিত্রের সংখ্যা মোটেও কম না। এত অল্প পরিসরে এতগুলো চরিত্র নিয়ে কাজ করা, এবং প্রতিটিতেই সমান যত্ন নেয়া দারুণ কুশলতার ব্যাপার।
— হাসান মাহবুব
চিরায়ত উপন্যাস হতে একটা গল্পে যা যা উপকরণ লাগে, এই বইয়ে সেসব উপকরণ আছে পরিমাণমতো, ফলে স্বাদে হয়নি হেরফের বরং, এই পরিবেশ, এই পরিচিতি, এই বিজ্ঞান আমাদের মনে হয় খুব খুব পরিচিত। স্টোরি টেলিং স্পন্টেনিয়াস। গল্প এগিয়েছে এফোর্টলেসভাবে… উপন্যাসিক একটা নাটাই থেকেই ছেড়েছেন অনেকগুলো সুতো… এবং দিন শেষে সবগুলো ঘুড়ি নিয়েই ফিরেছেন ঘরে।
— নাহিদ ধ্রুব
বইটি কিনুন নিচের অনলাইন শপগুলো থেকে