স্লটারহাউজ ফাইভের পরে চ্যাম্পিয়নদের ব্রেকফাস্টই সম্ভবত মার্কিন লেখক কার্ট ভনেগাটের সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় উপন্যাস। ননসেন্স ন্যারেটিভের আড়াল নিয়ে বইটি আমেরিকান কালচার ও আমেরিকান ড্রিমের ফাঁকিঝুকি নিয়ে এমন সব বিদ্রূপ করতে সফল হয় যে আমি চমকে উঠেছিলাম শেষ করে। শুধু কি আমেরিকান কালচার?
আধুনিক বিশ্বের যাবতীয় মূল্যবোধ, বেঁচে থাকা, আর প্রতিষ্ঠিত ধ্যানধারণাকেই যেন ব্যঙ্গ করতে চায় “চ্যাম্পিয়নদের ব্রেকফাস্ট অথবা চিরবিদায় বিষণ্ণ সোমবার।” ফ্রি উইল কী জিনিস, জীবনের কী উদ্দেশ্য, আধুনিকতা ও মানুষের হিংস্রতা, এইসব বিষয়ের উত্তর খুঁজতে যেন কৌতুকের ছলে আহ্বান জানান লেখক। কিংবা কিছুই জানান না।
যেন বা লেখক জানেন, চাইলেই এ বই আপনি পড়ে ভুলে যেতে পারেন, এতে কারও কিছু আসে যায়না। কিন্তু যদি ভুলে না যান, আপনি তো মনেই রাখবেন।
এনামুল রেজা
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২০
মিরপুর, ঢাকা
অধ্যায় এক
খুব দ্রুত মরে যাচ্ছিল এমন এক গ্রহের দুই নিঃসঙ্গ, রোগা পাতলা ও বেশ বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ লোকের মুখোমুখি সাক্ষাত নিয়ে এই কাহিনী।
তাদের একজন হচ্ছে বিজ্ঞান কল্পকাহিনীর লেখক কিলগোর ট্রাউট। ঐ সময়ে লোকটা একেবারেই অখ্যাত ছিল, ভেবে নিয়েছিল তার জীবন শেষ, আর কিছুই বাকি নাই। লোকটাকে ভুল বুঝেছিল সবাই। আলোচ্য সাক্ষাতের ফলাফল হিসেবে সে পরবর্তিকালে সকলের খুব পছন্দের এবং মনুষ্যইতিহাসের অন্যতম মান্যগণ্য লোক হয়ে ওঠে।
যেই লোকের সঙ্গে ট্রাউটের মুখোমুখি হয়েছিল সে ছিল এক গাড়ির কারবারি, পরিষ্কার করে বললে পন্টিয়াক কোম্পানির গাড়ি বিক্রি করত। তার নাম ডোয়াইন হুভার। ঐসব দিনে প্রায় উন্মাদ হবে হবে এমন অবস্থা ছিল ডোয়াইন হুভারের।
শুনুনঃ
ট্রাউট আর হুভার দুইজনেই ছিল ইউনাইটেড ষ্টেটস অব আমেরিকার নাগরিক, যেই দেশকে সবাই সংক্ষেপে আমেরিকা বলে ডাকতো। নিচে তাদের জাতীয় সঙ্গীত তুলে দেয়া যেত। কিন্তু আপনারা একটু কষ্ট করে খুঁজে নিন।
মহাবিশ্বে এক কোয়াড্রিলিয়ন (দশ লক্ষ্যের চতুর্ঘাত) জাতি আছে, কিন্তু ট্রাউট আর হুভার যেই জাতির লোক ছিল একমাত্র তাদের জাতীয় সঙ্গীতের শেষেই অর্থহীনভাবে একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন জ্বলজ্বল করত।
এই যে এই রকম দেখতে তাদের জাতীয় পতাকাঃ
জাতীয় পতাকা নিয়ে এই জাতির এক আইন ছিল যা ঐ গ্রহের আর কোন জাতির মধ্যে ছিলনা, তা হল – “এই পতাকা কোন ব্যক্তি বা বস্তুর সামনে ঝুঁকানো যাবেনা।”
পতাকা-অবনত করাটা এক ধরণের বন্ধুত্বপূর্ণ ও সম্মানজনক কেতা, এই কাজে প্রথমে পতাকাদণ্ডটা ঝুঁকিয়ে মাটির কাছাকাছি নেয়া হয়, তারপর আবার উপরে তুলে ধরা হয়।
ডোয়াইন হুভার আর কিলগোর ট্রাউট যে জাতির লোক, তাদের জাতীয় আপ্তবাক্য ছিল এমন এক ভাষায় যা দিয়ে লোকে আর কথা বলতোনা, “ই প্লুরিবাস ইউনাম” অর্থাৎ “অনেকের মধ্যে, এক।”
অনবনত পতাকা ছিল এক সৌন্দর্য, জাতীয় সঙ্গীত আর ফাঁপা আপ্তবাক্যে কারও কিছু আসত যেতনা যদি না তা এজন্য কাজে লাগতঃ বহু নাগরিক নিজেদের এতই অবহেলিত, প্রতারিত ও অপমানিত মনে করত যে তারা ভাবত হয়ত এক ভুল দেশে আছে, কিংবা তারা মূলত আছে ভুল একটা গ্রহেই, ভাবত যে নিশ্চয় কোথাও একটা ভীষণ গণ্ডগোল হয়েছে। যদি তাদের জাতীয় সঙ্গীত আর জাতীয় আপ্তবাক্যে সৌন্দর্য, ভাতৃত্ব, আশা কিংবা আনন্দের কথাও থাকত, তবে হয়ত কেউ কেউ একটু হলেও সান্ত্বনা পেত, নিজেদেরকে এ দেশের সমাজ এবং সম্পত্তির ভাগীদার মনে করতে পারত।
যদি তারা নিজেদের কাগুজে টাকার নোটগুলোর উপর গবেষণা করত আর বের করতে চাইত তাদের দেশটা আসলে কী জিনিস, আরও অনেক হাবিজাবির ভিড়ে তারা খুঁজে পেত ছোট্ট এক পিরামিডের উপর জ্বলজ্বল করছে একটা চোখ যা কিছুটা এইরকম দেখতেঃ
স্বয়ং আমেরিকার প্রধানমন্ত্রীও জানতেন না এই জিনিসের মানেটা কী। অবশ্য এই দেশ নিজের নাগরিকদের সব সময় বলে এসেছে, “অর্থহীনতাই শক্তি।”
এইসব অর্থহীনতার অনেকগুলোই ছিল কিলগোর ট্রাউট আর ডোয়াইন হুভারের জাতীর পিতাদের কৌতুকপ্রবণতার ফলাফল। এই জাতীর পিতারা সকলেই ছিলেন সম্ভ্রান্ত লোকজন, এবং নিজেদের অর্থহীন পড়ালেখার হামবড়া ভাব দেখাতে ব্যস্ত, যেই পড়ালেখা ছিল মূলত আদ্যি আমলের ভজহরি কেত্তন। এদের অনেকেই আবার নিষ্কর্মা ধরণের কবিও ছিলেন।
তবে কিছু কিছু অর্থহীন ব্যাপার ছিল অশুভ, মানে যেহেতু ওগুলো ছিল ভয়ানক সব অপরাধ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, শিক্ষকেরা ব্ল্যাকবোর্ডে একটা সাল বারবার লিখে লিখে গর্বের সঙ্গে তা মনে রাখতে বাধ্য করত শিশুদের, তা হলঃ
১৪৯২
শিক্ষকেরা বাচ্চাদের শেখাত এ হল সেই সাল যখন তাদের মহাদেশ আবিষ্কার করেছিল মানুষের দল। কিন্তু এর পূর্বেও বহু মানুষ এ ভূখণ্ডে বসবাস করত নিজেদের মত। ১৪৯২ মূলত সেই বছর, যখন থেকে জলদস্যুরা মহাদেশটিতে আক্রমণ, ধোঁকাবাজি আর হত্যাকান্ড শুরু করে।
আরও এক অর্থহীন শয়তানি যা বাচ্চাদের শেখানো হতঃ জলদস্যুরাই এ ভূখণ্ডে ঘটনাক্রমে এমন এক সরকার গঠন করেছিল যা হয়ে ওঠে মনুষ্যস্বাধীনতার জন্য এক আলোকবর্তিকা। বাচ্চারা যেন এই আলোকবর্তিকার ব্যাপারটি বোঝে এজন্য তৈরি হয় অনেক ভাস্কর্য, আঁকা হয় অনেক ছবি। তা দেখতে অনেকটা এইরকম যেন একটা আইসক্রিম কোনের উপরে আগুন জ্বলছে।
আসলে, জলদস্যুদের গঠন করা নতুন সরকারের কাজ ছিল স্বাধীন মানুষদের ধরে ধরে দাস বানানো। তারা মানুষকে যন্ত্র হিসেবে কাজে লাগাত, আর, এমনকি দাসপ্রথা বিলুপ্ত হবার পরেও, যা আসলে খুবই বিব্রতকর একটা ব্যাপার ছিল, তারা এবং তাদের উত্তরসূরিরা সাধারণ মানুষকে যন্ত্রই ভাবত।
জলদস্যুদের ছিল শাদা চামড়া। যে সব লোক আগে থেকে মহাদেশটিতে বসবাস করত তারা ছিল তাম্রবর্ণ। মহাদেশে যখন দাসপ্রথা চালু হল, এই দাসেরা ছিল কৃষ্ণাঙ্গ।
মানুষের গায়ের রঙই ছিল সবকিছুর নিয়ন্তা।
এই যে এইভাবে জলদস্যুরা যার থেকে যা ইচ্ছে তাই কেড়ে নিতে পারতঃ তাদের কাছে ছিল পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম নৌযান, তারা আর যে কোন মানুষের তুলনায় কুচক্রী ছিল, তাদের ছিল বারুদ, যা মূলত পটাশিয়াম নাইট্রেট, কয়লা এবং সালফারের এক মিশ্রণ। এই বারুদে আগুন দিলে জিনিসটা ভয়ানকভাবে গ্যাসে রূপান্তরিত হত। তীব্র গতিতে এই গ্যাস ধাতব নলের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসত। যা ছিল সহজেই মাংস ও হাড় ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার ওস্তাদ। সুতরাং জলদস্যুরা সহজেই যে কোন অবাধ্য মানুষ আর তার প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে এমনকি দূর থেকেই ধ্বংস করে দিতে পারত।
জলদস্যুদের প্রধানতম অস্ত্র ছিল প্রতিপক্ষকে ভড়কে দেওয়ার ক্ষমতা। কেউই সময়মত বুঝে উঠতে পারতোনা যে কী পরিমাণ হৃদয়হীন এবং লোভী ছিল ওরা।
যখন ডোয়াইন হুভার আর কিলগোর ট্রাউট মুখোমুখি হয়, সে সময়ে তাদের দেশটা সন্দেহাতীতভাবে এই গ্রহের সবচেয়ে ধনী ও শক্তিমত্ত রাষ্ট্র ছিল। এদের ছিল সবচেয়ে সমৃদ্ধ শস্যভাণ্ডার, খনিজ সম্পদ ও যন্ত্রপাতি, এবং তারা আর যে কোন দেশকে সুশৃঙ্খল করে তুলেছিল রকেট ছুঁড়ে মারবার বা এরোপ্লেন থেকে বিশেষ বস্তু এনে ফেলার হুমকি দিয়ে।
অধিকাংশ দেশেরই কিছু করার উপায় ছিলনা। অনেক দেশ এমনকি বসবাসেরও অযোগ্য হয়ে উঠেছিল। তাদের ছিল আকারের তুলনায় মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যা। যা কিছু বিক্রি করবার মত সবই তারা বিক্রি করে ফেলেছিল, এবং খাওয়ার মত কিছু আর অবশিষ্ট ছিলনা, অথচ তারা সমানে চোদাচুদি করে যাচ্ছিল।
চোদাচুদি হল সেই কাজ যা থেকে বাচ্চা তৈরি হয়।
এই ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রহের বহু লোক ছিল কম্যুনিস্ট। ওদের একটা তত্ত্ব ছিল যে, এই গ্রহে যা কিছু আছে সবকিছু সমানভাবে সকলের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিতে হবে, কেননা কেউ তো আর সেধে সেধে এই ধ্বংসপ্রাপ্ত গ্রহে জন্ম নিতে চায়নাই। এর মাঝেই বহু বাচ্চার জন্ম হচ্ছিল – হাতপা ছুঁড়ছে, চিৎকার করছে, দুধের জন্য কাঁদছে।
কোন কোন যায়গায় লোকজন এমনকি ক্ষুধার তাড়নায় পাতলা কাদা কিংবা পাথর চুষে খেতে চেষ্টা করত যেখানে হয়ত মাত্র কয়েক ফুট দূরে আরও আরও বাচ্চার জন্ম হত।
এবং এভাবেই চলে যাচ্ছিল।
সবকিছুতে পরিপূর্ণ ডোয়াইন হুভার আর কিলগোর ট্রাউটের দেশ ছিল কম্যুনিজম বিরোধী। এই দেশ মনে করত, পৃথিবীবাসিদের মাঝে যাদের অনেক কিছু আছে, একান্ত ইচ্ছে না গেলে তা অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করার মানে নেই, আর বেশিরভাগ লোকেরই ভাগাভাগি করতে ইচ্ছে করতোনা।
তাই তাদের করতেও হতনা ভাগাভাগির কাজটা।
আমেরিকার সকল লোকেই যা সামনে পেত আঁকড়ে ধরতে চাইত আর চাইত যে তা ধরেই থাকতে। কিছু আমেরিকান ছিল ধরতে খুবই পটু। আর বাকিরা লবডংকা, কিছুই ধরতে পারতোনা।
কিলগোর ট্রাউটের সঙ্গে যখন সাক্ষাত হয়, ডোয়াইন হুভার তখন ভালমতোই “ধরতে খুবই পটু” রকমের মানুষ ছিল। এক সকালে এক লোক ঠিক এই শব্দগুলোই ডোয়াইনের কানে কানে বলেছিল হেঁটে যেতে যেতে” “ধরতে খুবই পটু।”
এবং এই গ্রহের কতটুকু সম্পদ ছিল কিলগোর ট্রাউটের? লবডংকা পরিমাণ।
এবং কিলগোর ট্রাউট আর ডোয়াইন হুভারের দেখা হয়েছিল ডোয়াইনের নিজের শহর মিডল্যান্ড সিটিতে, ১৯৭২ সালের শরৎকালে এক শিল্পমেলায়।
যেহেতু এর মাঝেই ব্যাপারটা খুলে বলা হয়েছেঃ ডোয়াইন ছিল এক পন্টিয়াক বিক্রেতা যে উন্মাদ হবার পথে ছিল।
ডোয়াইনের ধীরে ধীরে উন্মাদ হবার প্রক্রিয়াটা মূলত রাসায়নিক এক ঘটনা। ওর শরীর এমন কিছু রাসায়নিক পদার্থ উৎপাদন করছিল যা লোকটার মানসিক স্থিতিকে খেয়ে নিচ্ছিল দিনকে দিন। কিন্তু আর যে কোন নয়া পাগলের মতই ডোয়াইনের দরকার ছিল কিছু বাজে চিন্তাভাবনার, যা তার পাগলামোকে আরও সুগঠিত করবে ও একটা দিশা দেবে।
বাজে রাসায়নিক পদার্থ আর বাজে চিন্তাকে বলা চলে উন্মাদনার জিং এবং জ্যাং। জিং জ্যাং হচ্ছে সৌহার্দ্যের চৈনিক প্রতীক। তারা অনেকটা এইরকম দেখতেঃ
ডোয়াইন হুভারকে বাজে চিন্তা সর্বরাহ করেছিল কিলগোর ট্রাউট। ট্রাউট নিজেকে কেবল নিরাপদই নয় এমনকি রীতিমত অদৃশ্য মনে করত। দুনিয়া তাকে এতই অমনোযোগ দিয়েছিল যে ট্রাউট ভাবত সে আসলে মরে গেছে অনেক আগেই।
সে আশা করেছিল যে তার মৃত্যু হয়েছে।
কিন্তু ডোয়াইনের সঙ্গে দেখা হবার পর ট্রাউট বুঝেছিল যে এমনকি কোন মানুষকে চিন্তাভাবনা সর্বরাহ করার মত যথেষ্ট জীবন্ত সে, এমন সব চিন্তাভাবনা যা ঐ লোকটিকে এক দানবে রূপান্তরিত করতে সক্ষম।
এই হল সেইসব বাজে চিন্তার মূল অংশ যা ডোয়াইনকে সর্বরাহ করেছিল ট্রাউটঃ ডোয়াইন হুভার ছাড়া পৃথিবীর আর সকলেই ছিল রোবট।
মহাবিশ্বের সকল সৃষ্টির মধ্যে ডোয়াইনই একমাত্র ব্যক্তি যে ভাবতে ও অনুভব করতে পারতো ও চিন্তিত হতে পারতো এবং পরিকল্পনা ও যা যা আছে সমস্ত কিছু করতে পারতো। আর কেউ জানতোনা ব্যাথা বেদনা কী বস্তু। আর কারও কোন সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা ছিলনা। সে ছাড়া আর সকলেই ছিল সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় একেকটা মেশিন, যাদের উদ্দেশ্য ছিল ডোয়াইনকে খুশি রাখা। ডোয়াইন মহাবিশ্বের স্রষ্টার এক নতুন ধরণের সৃষ্টি ও নিরীক্ষা।
কেবলমাত্র ডোয়াইন হুভারেরই ছিল ইচ্ছের স্বাধীনতা।
ট্রাউট কোনদিন ভাবতেও পারেনাই যে কেউ তার কথাগুলো আমলে নেবে। বাজে ভাবনাগুলো সে তার এক বিজ্ঞান কল্পকাহিনীতে ঢুকিয়ে দিয়েছিল, এবং ঐখানেই ডোয়াইন তাদের আবিষ্কার করে। ডোয়াইনকে উদ্দেশ্য করেও বইটি লেখা হয়নাই। লেখার সময় ট্রাউট তার নামও জানতোনা। এইটা মূলত লেখা হয়েছিল যখন যে পাতা উল্টে পড়তে শুরু করবে তারই জন্য। মানে বইটা লেখা হয়েছিল এইভাবে, “এই যে – ভাব দেখি, তুমি হইলা এই বিশ্বজগতের স্বাধীন ইচ্ছাধারী একমাত্র জন্তু। এইটা ভাইবা তোমার কেমন লাগতেছে বলো দেখি।”
সুখপাঠ্য তরতরে এক বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী।
কিন্তু এই বইই ডোয়াইনের মাথায় বিষ ঢেলে দিয়েছিল।
ব্যাপারটা কিলগোর ট্রাউটকে এতই নাড়িয়ে দিয়েছিল যে সে ভাবতেই পারছিলনা তার মত এক লোক বাজে চিন্তার আদলে অশুভকে ডেকে আনতে পারে দুনিয়ায়। এবং, ধরে বেঁধে ডোয়াইন হুভারকে একটা পাগলাগারদে নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই সমস্ত অসুখের কারণ ও প্রতিকার হিসেবে চিন্তাভাবনার গুরুত্ব বিষয়ে একজন চরমপন্থি হয়ে উঠেছিল ট্রাউট।
কিন্তু কেউই শুনতোনা তার কথা। বুনো অরণ্যে সে ছিল এক নোংরা বুড়ো লোক, যে গাছপালা আর ঝোপঝাড়ের মাঝে এই বলে কেঁদে ফিরত, “চিন্তাভাবনা কিংবা এর অভাবই যে কোন অসুখের কারণ।”
এক সময় মানসিক স্বাস্থ্যের গবেষণায় কিলগোর ট্রাউট এক পথনির্দেশক হয়ে ওঠে, যে তার তত্ত্বগুলোকে সম্প্রসারিত করেছিল নিজের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীগুলোর আড়ালে। ট্রাউটের মৃত্যু হয় ১৯৮১ সালে, ডোয়াইন হুভারকে উন্মাদ করে তোলার প্রায় কুড়ি বছর পর।
এরপর থেকেই তাকে একজন মহান শিল্পী ও বৈজ্ঞানিক হিসেবে গণ্য করা হতে থাকে। আমেরিকান শিল্প ও বিজ্ঞান একাডেমী তার কবরে এক স্মৃতিফলক খাড়া করে দেয়। যার উপরে লোকটার অসমাপ্ত শেষ উপন্যাস (দুইশত নয়তম) থেকে একটা লাইন খোদাই করা ছিল। স্মৃতিফলকটা দেখতে অনেকটা এইরকমঃ
(চলবে)
অথচ তারা সমানে চোদাচুদি করে যাচ্ছিল…
লেখকের বিদ্রুপ ও হতাশা এই বাক্যের মধ্যে আসল কি?