স্লটারহাউজ ফাইভের পরে চ্যাম্পিয়নদের ব্রেকফাস্টই সম্ভবত মার্কিন লেখক কার্ট ভনেগাটের সবচেয়ে বিখ্যাত ও জনপ্রিয় উপন্যাস। ননসেন্স ন্যারেটিভের আড়াল নিয়ে বইটি আমেরিকান কালচার ও আমেরিকান ড্রিমের ফাঁকিঝুকি নিয়ে এমন সব বিদ্রূপ করতে সফল হয় যে আমি চমকে উঠেছিলাম শেষ করে। শুধু কি আমেরিকান কালচার?
আধুনিক বিশ্বের যাবতীয় মূল্যবোধ, বেঁচে থাকা, আর প্রতিষ্ঠিত ধ্যানধারণাকেই যেন ব্যঙ্গ করতে চায় “চ্যাম্পিয়নদের ব্রেকফাস্ট অথবা চিরবিদায় বিষণ্ণ সোমবার।” ফ্রি উইল কী জিনিস, জীবনের কী উদ্দেশ্য, আধুনিকতা ও মানুষের হিংস্রতা, এইসব বিষয়ের উত্তর খুঁজতে যেন কৌতুকের ছলে আহ্বান জানান লেখক। কিংবা কিছুই জানান না।
যেন বা লেখক জানেন, চাইলেই এ বই আপনি পড়ে ভুলে যেতে পারেন, এতে কারও কিছু আসে যায়না। কিন্তু যদি ভুলে না যান, আপনি তো মনেই রাখবেন।
এনামুল রেজা
![কার্ট ভনেগাটের আঁকা ছবি](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/চ্যাম্পিয়নদের-ব্রেকফাস্ট.jpg)
অধ্যায় দুই
ডোয়াইন হুভার ছিল বউমরা। নিজের একাকী রাতগুলো সে কাটাত শহরের সবচেয়ে ধনী মহল্লা ফেয়ারচাইল্ড হাইটসের এক স্বপ্নের মত বাড়িতে। তখনকার দিনে ও ধারা বাড়িগুলো বানাতে কমপক্ষে এক লাখ ডলারের মত খরচ হত। প্রত্যেকটা বাড়িই দাঁড়িয়ে থাকত কমপক্ষে চার একর জমির উপর।
স্পার্কি নামের এক কুত্তা ছিল ডোয়াইনের একমাত্র নৈশসঙ্গী, একটা ল্যাবরেডর রিট্রিভার। বহু বছর আগে এক গাড়ি দুর্ঘটনার পর থেকে নিজের লেজটা নাড়াতে পারতনা স্পার্কি, এজন্যই ওর পক্ষে অন্য কুকুরদের নিজের বন্ধুবাৎসল্য বুঝিয়ে দেয়া অসম্ভব ছিল। সব সময়েই লড়তে হত স্বজাতির বিরুদ্ধে। ওর কানদুটো ছিল ছেঁড়া। সারা গা ভরতি দাগ।
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
লোটি ডেভিস নামের এক কৃষ্ণাঙ্গ চাকরানী ডোয়াইনের ঘরদোরের কাজ করে দিত। ঘর পরিষ্কার রাখা। রান্না করে টেবিলে সাজিয়ে দেয়া। এরপর বাসায় ফিরে যেত সে। তার পূর্বপুরুষেরা ছিল দাস।
একে অন্যকে বেশ পছন্দ করলেও লোটি ডেভিস আর ডোয়াইন হুভারের মধ্যে তেমন কথাবার্তা হতনা। ডোয়াইন অধিকাংশ কথা সারত তার কুত্তার সঙ্গে। মেঝেতে শুয়ে স্পার্কির সঙ্গে গড়াগড়ি যেত, ‘তুই আর আমি রইছি শুধু, বুচ্ছিস স্পার্ক,’ কিংবা “কী অবস্থা আমার বুইড়া খাটাস?’ এই ধরণের বাতচিত আরকি।
কোন রকম পরিবর্তন ছাড়াই চলে যাচ্ছিল এভাবে, এমনকি ডোয়াইন উন্মাদ হয়ে যাওয়ার পরেও, সুতরাং লোটির চোখে অস্বাভাবিক কিছু ধরা পড়ার উপায় ছিলনা।
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
বিল নামের এক বাজরিগা বা এই জাতীয় একটা পাখি পুষত কিলগোর ট্রাউট। সেও রাতের বেলা ডোয়াইন হুভারের মত একাই থাকত। বাতচিত করত তার পোষা পাখির সঙ্গে।
ডোয়াইন যখন তার ল্যাবরেডর রিট্রিভারের সঙ্গে ভালবাসা নিয়ে বকবক করত, ট্রাউট তার প্যারাকিটকে শোনাত কেয়ামত বিষয়ক কথাবার্তা। ‘দুনিয়া যে কোন সময় ধ্বংস হইব, বুঝলি?’ ‘অনেক তো হইল, আর কত?’ তার তত্ত্ব অনুযায়ী বায়ুমন্ডল আর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই নিঃশ্বাস নেওয়ার অযোগ্য হয়ে উঠবার কথা ছিল।
ট্রাউট মনে করত বায়ুমন্ডল যখন বিষাক্ত হয়ে উঠবে, তার কয়েক মিনিট আগেই মেঝেতে উল্টে পড়ে থাকবে বিল। এই নিয়ে নিজের পোষা পাখিটার সঙ্গে সে মজা করত। ‘তোর বুড়া ফুসফুসের কী অবস্থা অ্যাঁ? কাজ করতেছে ঠিকঠাক?’ নইলে সে হয়ত বলত, ‘হেঁ রে তোর শ্বাসকষ্টের সমস্যা হইতেছে নাকি আজকাল বিল?’ কিংবা ‘তোর শেষকৃত্যটা কেমন হইব? এইটা নিয়া তো কখনও আমার লগে আলাপ করলিনা হেঁ? আর তোর ধর্মটা কী? এইটাও আমারে জানাইলিনা কখনও?’
বিলকে সে বলত যে মানবজাতির উচিত জঘণ্যভাবে শেষ হয়ে যাওয়া, কেননা এরা এত মিষ্টি আর সুন্দর একটা পৃথিবীর সঙ্গে খুবই নিষ্ঠুরের মত আচরণ করে এসেছে চিরকাল। সে বলত, ‘আমরা সবাই হিলিওগাবালাসের মত, বুচ্ছিস বিল।’
হিলিওগাবালাস ছিল এক কুখ্যাত রোমান সম্রাট। একবার ভাস্করকে দিয়ে সে একটা বড় আকারের লোহার ষাঁড় বানিয়েছিল, ওটার গায়ে একটা দরোজা ছিল যা বাইরে থেকে বন্ধ করে দেওয়া যেত। আলো বাতাস চলাচলের একমাত্র উপায় ছিল ষাঁড়ের খোলা মুখ।
মাঝেমধ্যেই সম্রাট তার এই লৌহষাঁড়ের পেটে একজন মানুষকে ঢুকিয়ে দরোজা আঁটকে দিত। মজা দেখার জন্য অতিথিদের নিমন্ত্রণ জানাত ভোজসভায়, মজুদ থাকত যথাযথ রূপসী নারী ও সুন্দর বালকের দল, ওয়াইনের পিপে, টেবিলভর্তি রাজকীয় সব খাদ্য। এরপর লৌহষাঁড়ের পেটের নিচে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হত। আগুনের তাপ বাড়ত, ভিতরে বন্দী মানুষটা আর্তনাদ করে যাই বলুকনা কেন তা বের হয়ে আসত ষাঁড়ের খোলা মুখ দিয়ে, যেন বা ষাঁড়টাই আর্তনাদ করছে।
এভাবেই চিরায়ত বিশ্বসাহিত্য পাঠাগার নামে এক সংস্থার সন্ধান পায় সে, যারা ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেসের সচিত্র চটিপ্রকাশক। ওরা ট্রাউটের পাণ্ডুলিপিগুলোকে কাজে লাগাত চটির আকার স্বাস্থ্যবান করতে, যেগুলোয় এমনকি কোন নারী চরিত্র পর্যন্ত থাকতনা। কিলগোর ট্রাউটের যৌনসংশ্রবহীন কাহিনীগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ওরা জুড়ে দিত যৌনভুরভুরে সব ছবি।
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
কিলগোর ট্রাউট আরও একটা কাজ করত যা অনেকের কাছেই উদ্ভট বলে মনে হতে পারেঃ আয়নাকে সে বলত লিক বা ফুটো। আয়না হচ্ছে দুটি পাশাপাশি জগতের মধ্যে সংযোগকারী একটা গর্ত – এমন ভেবে মজা পেত সে।
কখনও কোন বাচ্চাকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলে সে আঙুলের ইশারায় সতর্ক করে বলত, ‘ফুটোর কাছে যাইওনা খবদ্দার, অন্য আরেক জগতে তো তুমি হারাইয়া যাইতে চাওনা, নাকি?’
মাঝেমধ্যে কেউ তাকে বলে ফেলত, ‘শুনেন, এখ্যান লিক নিতে হইব আমাকে, খুব চাপ লাগতেছে।’ লিক মানে একটা নালা দিয়ে পাকস্থলীর তরল বর্জ্য বের করার পদ্ধতি, মানে ঐ মুতুমকে ভদ্রস্থ করে বলা যে এখ্যান লিক নিমু।
ট্রাউট যথারীতি ঠাট্টার ছলে লোকটাকে বলত, ‘আমি যেইখান থিকা আসছি, সেইখানে লিক নিমুর মানে হইল তুমি এখ্যান আয়না চুরি করবার চাও? ছিছিছি।’
যখন কিলগোর ট্রাউটের মৃত্যু হয়, সবাই ততোদিনে আয়নাকে লিক বা ফুটো বলে ডাকছে। অবস্থা এমনি দাঁড়িয়েছিল যে মানুষ তার ঠাট্টা-তামাশাকেও সম্মানের চোখে দেখত।
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
১৯৭২ সালে নিউইয়র্কের কোহসে এক বেজমেন্ট এপার্টমেন্টে বসবাস ছিল ট্রাউটের। বাসাবাড়িতে এলুমিনিয়ামের বিশেষ ধরনের জানালা বসাবার কাজ করত সে। যদিও এই ব্যবসার বিক্রিবাট্টা বিষয়ে তার অবস্থা ছিল লবডংকা, কেননা চটক বা ভরসা পাওয়া যায় এমন বিশেষ কিছু তার মধ্যে ছিলনা। চটক হচ্ছে এমন এক কৌশল যা দেখে নিতান্ত অচেনা লোকও আপনাকে পছন্দ করে ফেলবে আর বিশ্বাস করবে, আপনার মনে যে মতলবই থাকুক না কেন।
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
ডোয়াইন হুভারের ছিল পর্যাপ্ত পরিমাণের চটক।
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
আমারও অনেক চটক আছে, চাইলেই দেখাতে পারি।
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
চটকের অভাব নাই এমন বহু লোক আছে।
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
ট্রাউটের অফিসকর্তা বা সহকর্মীর দল কেউই জানত না যে সে একজন লেখক। ডোয়াইন হুভারের সঙ্গে যখন তার মুখোমুখি সাক্ষাত হয়, সে সময় কোন বড় প্রকাশক তার নাম পর্যন্ত শোনেনাই যদিও এর মাঝেই তার একশ সতেরটা উপন্যাস আর হাজার দুয়েক ছোট গল্প প্রকাশিত হয়ে গিয়েছিল।
কোন লেখারই অনুলিপি তৈরি করতনা ট্রাউট। যা লিখত, ওসব কোন রকম ডাকটিকেট বা ফিরতি-খাম ছাড়াই ডাকে ফেলে দিত। মাঝেমধ্যে এমনকি ফিরতি-ঠিকানাও সে লিখতনা খামের গায়ে। গণ-পাঠাগারে বসে বসে মন দিয়ে যেসব ম্যাগাজিন পড়ত, সেখান থেকেই লেখালেখির ধান্দায় নিবেদিত সব প্রকাশকদের নাম ঠিকানা যোগাড় করত। এভাবেই চিরায়ত বিশ্বসাহিত্য পাঠাগার নামে এক সংস্থার সন্ধান পায় সে, যারা ছিল ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলেসের সচিত্র চটিপ্রকাশক। ওরা ট্রাউটের পাণ্ডুলিপিগুলোকে কাজে লাগাত চটির আকার স্বাস্থ্যবান করতে, যেগুলোয় এমনকি কোন নারী চরিত্র পর্যন্ত থাকতনা। কিলগোর ট্রাউটের যৌনসংশ্রবহীন কাহিনীগুলোর ফাঁকে ফাঁকে ওরা জুড়ে দিত যৌনভুরভুরে সব ছবি।
ওরা কখনওই জানাত না যে কখন তার লেখা প্রকাশিত হবে। এসব লেখার জন্য ট্রাউটকে তারা যে পরিমাণ টাকা পয়সা দিত তা হল এইঃ লবডংকা।
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
তারা এমনকি লেখক কপি পাঠাবারও দরকার মনে করত না। নিজের লেখা ছাপা ম্যাগাজিনগুলো ট্রাউটকে খুঁজে বের করতে হত চটির দোকান থেকে। এছাড়া লেখাগুলোয় সে নিজে যে শিরোনাম দিত, তা অনেক সময়ই বদলে যেত। দেখা গেল সে একটা গল্পের নাম রেখেছিল “আন্তঃনাক্ষত্রিক কেরানী”, চটিম্যাগাজিনের সম্পাদকেরা সেই নাম বদলে রাখত “উন্মত্ত গালের ফুটো।”
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
যাই হোক, ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে ট্রাউট সবচেয়ে বিভ্রান্ত হত ইলাস্ট্রেশনগুলো দেখেই, মানে তার কাহিনীর সঙ্গে স্বভাবতই ছবিগুলোর বিন্দুমাত্র সম্পর্ক থাকতনা। ধরা যাক, সে একটা উপন্যাস লিখল পৃথিবীর এক বাসিন্দা ডেলমোর স্ক্যাগকে নিয়ে, যে কিনা অবিবাহিত যুবা পুরুষ। তার যেই মহল্লায় বসবাস সেখানে সবারই অনেক বড় বড় পরিবার। অবিবাহিত হলে কী হবে, স্ক্যাগ তো ছিল এক বিজ্ঞানী, নিজের পরিবার বড় করার উপায় সে আবিষ্কার করে ফেলল। নিজের হাতের তালু থেকে জীবন্ত কিছু কোষ সে ছেড়ে দিত চিকেন সুপের মধ্যে। এরপর সেই চিকেন সুপের মিশ্রণে ফেলত মহাজাগতিক রশ্মি। ব্যাস। ঐসব জীবন্ত কোষগুলো ছোট ছোট বাচ্চায় রূপান্তরিত হত যারা সকলেই দেখতে ডেলমোর স্ক্যাগের মতন।
খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তার ঘরে রোজ বেশ কয়েকটা করে বাচ্চার জন্ম হতে লাগল। ঘর ভরে গেল অজস্র শিশুতে। পাড়া-প্রতিবেশীদের ডেকে এনে গর্বের সঙ্গে নিজের বাচ্চাদের ব্যাপটাইজ করত ডেলমোর। প্রায় প্রত্যেক দিনই। যেদিন একবারে একশ বাচ্চা জন্ম নিত, সেদিন ব্যাপটিজম হত গণহারে। এভাবে চলার ফলে দ্রুতই সে একজন বিখ্যাত সংসারী লোক হয়ে উঠল।
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
স্ক্যাগ আশা করেছিল অতিরিক্ত বড় পরিবার তৈরির বিরুদ্ধে আইন প্রণয়নে নিজের দেশকে সে বাধ্য করবে, কিন্তু আইনপ্রণেতাগণ ও মহামান্য আদালত তার এই বিষয়টিকে আমলেই নিলনা। বরং তারা “কোন অবিবাহিত লোক চিকেন সুপ বানাতে পারবেনা” এই মর্মে এক কঠিন আইন পাশ করল।
যাই হোক, এইরকম একটা কাহিনীর মধ্যে যে সব ইলাস্ট্রেশন থাকত তা হল ঘোলা ঘোলা সব ছবিতে দেখা যেত বিভিন্ন শ্বেতাঙ্গ নারী একজন কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষকেই মুখোরমণ* দিচ্ছে, কোন এক কারণে লোকটা ধামার মত বড় এক হ্যাট পরে থাকত মাথায়। এই হ্যাটের নাম মেক্সিকান সোমব্রেরো।
যে সময়টায় ডোয়াইন হুভারের সঙ্গে তার সাক্ষাত হয়, ট্রাউটের সর্বাধিক প্রচারিত বই “চরকার উপরে মহামারী।” প্রকাশক এই বইয়ের নামটা আর বদল করলনা, তবে প্রচ্ছদে শিরোনামের অর্ধেক আর ট্রাউটের সম্পূর্ণ নাম মুছে দিয়ে জ্বলজ্বলে ব্যানারে লিখলঃ
![wide-open-beavers](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/wide-open-beavers.jpeg)
ওয়াইড ওপেন বিভার হচ্ছে এমন এক নারীর ছবি যেখানে নারীটি কোন রকম প্যান্টি ছাড়াই দুই দিকে পা মেলে বসে থাকে, যাতে তার যোনীমুখটা সহজেই দেখতে পাওয়া যায়। এই নামটা সর্বপ্রথম ব্যবহার করে চিত্রসাংবাদিকেরা, যারা মাঝেমধ্যেই দুর্ঘটনাবশত বা ক্রীড়ানুষ্ঠানে মেয়েদের স্কার্টের নিচে কী আছে দেখে নেয়ার সুযোগ পেত, আর স্কার্টের নিচ থেকে তো আসলে আগুন বেরিয়ে আসে বা যাই হোক। এমন কোন সুযোগ মিললে সহকর্মী, বন্ধুভাবাপন্ন পুলিশ বা অগ্নিনির্বাপকদের সঙ্গেও তা ভাগাভাগি করে নিতে একটা সাংকেতিক শব্দ দরকার ছিল চিত্রসাংবাদিকদের। শব্দটা ছিল এইঃ “বিভার!”
বিভার মূলত এক ধরণের বড় ইঁদুর প্রজাতির প্রাণী। পানি পছন্দ করে, এজন্য মাটির নিচে তারা পানির ড্যাম বানিয়ে রাখে। এরা এই রকম দেখতেঃ
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/beaver-1.png)
কিন্তু যেই ধরণের বিভার চিত্রসাংবাদিক আর তাদের বন্ধুবান্ধবদের উত্তেজিত করে তুলত তা দেখতে এই রকমঃ
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/real-beaver-1.png)
এইখান দিয়েই মূলত শিশুরা পৃথিবীতে আসত।
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
যখন ডোয়াইন বালক ছিল, ট্রাউট কিংবা আমিও বালক ছিলাম, এবং যখন আমরা সবাই মধ্যবয়স্ক বা আরও বেশি বয়স্ক হয়ে গেলাম, পুলিশ ও আদালতের দায়িত্ব ছিল এইটা দেখে রাখা যে এমন ধারা দৃশ্য বা বিষয় নিয়ে যাতে চিকিৎসাবিজ্ঞানের বাইরের কেউ নিরীক্ষা এবং আলাপ না করে। এইটা স্থির করা হয়েছিল যে “ওয়াইড ওপেন বিভার” যা কিনা আর যে কোন হাজার দশেক আসল বিভারের মতই স্বাভাবিক একটা বিষয়, একে সবচেয়ে কঠোর সুরক্ষা আইনের মাধ্যমে গোপন রাখা উচিত।
সুতরাং, ওয়াইড ওপেন বিভার নিয়ে উন্মাদনা তৈরি না হয়ে উপায় ছিলনা। পাশাপাশি নরম, দুর্বল এক ধাতু নিয়েও উন্মাদনা শুরু হয়, যাকে সবাই মিলে পৃথিবীর সবচেয়ে দামি ধাতু হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল, এই ধাতুর নাম হচ্ছে সোনা।
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/arrow-700x462.png)
এবং ওয়াইড ওপেন বিভার নিয়ে যে উন্মাদনা, তা প্রসারিত হল জাঙ্গিয়াতেও, যখন ডোয়াইন এবং ট্রাউট এবং আমার বালক বয়স। যে কোন মূল্যে বালিকারা তাদের জাঙ্গিয়া গোপন করে রাখত, এবং বালকের দল যে কোন মূল্যে তা দেখতে চেষ্টা করত।
মেয়েদের জাঙ্গিয়া ছিল এই রকম দেখতেঃ
![](https://enamulreza.com/wp-content/uploads/2020/09/19091809.gif)
ছোটবেলায় স্কুলে প্রথম যে বিষয়টা ডোয়াইন শিখেছিল, তা একটা ছড়া, যদি ঘটনাক্রমে কেউ কোন মেয়ের জাঙ্গিয়া দেখতে পেত, খেলার মাঠে চেঁচিয়ে ছড়াটা বলতে হত। এটা তাকে শিখিয়ে দিয়েছিল তার সহপাঠীরাই। ছড়াটা ছিল এমনঃ
ঐ দেখন যায় ইংলন্ড
ঐ দেখলাম ফরছি*
চুট কইরা এক পিচ্চি মাইয়ার
জাইঙ্গা দেখবার পারছি
১৯৭৯ সালে মেডিসিনে নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করার সময় কিলগোর ট্রাউট এক মর্মস্পর্ষি ভাষণ দেয়ঃ “কিছু লোক বলে যে প্রগতি বইলা কিছু নাই। বিষয় হইল, মনুষ্য হইতেছে পৃথিবীতে টিইকা থাকা একমাত্র প্রাণী, স্বীকার যাইতেছি, মানুষের এই বিজয় কিছুটা ঝাপসা রকমের হইছে। আপনেরা যারা আমার পূর্বেকার প্রকাশিত বইপত্র কিছু কিছু পড়ছেন হেরা বুঝবেন যে, বিশেষ কইরা কেন আমি খুব অনুতপ্ত শোকতপ্ত হইছিলাম যখন দুনিয়ার শেষ বিভারটা মারা গিছিল।”
“আমি যখন বালক, সেই সময় দুইজন দানব পৃথিবীটা ভাগাভাগি কইরা নিছিল, যাই হোক, আজ আমি অগো বিলুপ্তিরে সেলিব্রেট করতেছি। অরা আমাদের মাইরা ফেলতে বদ্ধপরিকর আছিল, কিংবা অন্তত আমাদের জীবনরে অর্থহীন বানাইতে চাইছিল। সফলও হয়া গিছিল প্রায়। দুই ভয়ানক শত্রু আছিল অরা, কিন্তু আমার ছোট্ট বন্ধু বিভারের দল ঐ রকম আছিলনা। সিংহরা? না। বেঘ্রগণ? না। সিংহ আর বেঘ্র তো ঝিমাইতেই থাকে বেশিরভাগ সময়। আমি যে দানবগো কথা বলতেছি, এরা কখনও ঝিমাইতনা। হেগ নিবাস ছিল আমাদের মাথার ভিতরে। হেগ একজন হইতেছে সোনার উপর সীমাহীন লালসা, ইশ্বর রক্ষা করুক আমগ, অন্যজন হইলেন এক ঝলকের লাইগা হইলেও পিচ্চি মাইয়াগোর জাঙ্গিয়া দেইখা নেওনের খায়েশ।”
“আমার মনে হয় যে, খুব হাস্যকর ঐসব লালসা, কেননা অরা আমগ শিখাইছিল যে মানুষের পক্ষে যে কোন কিছুই বিশ্বাস কইরা নেয়া সহজ, এবং খুব নিষ্ঠার লগে ঐ রকম বিশ্বাসে স্থির থাকন যায় – যে কোন বিশ্বাসের লগেই।”
“তাই অখনে আমরা নিঃস্বার্থভাবে নিজেদের এখ্যান নিঃস্বার্থ সমাজ গইড়া তোলার কাজে নিবেদিত করবার পারি, এক কালে যেমন আমরা সোনা এবং জাঙ্গিয়া নিয়া উতলা হইছিলাম।”
এইটুকু বলে কিলগোর ট্রাউট একটু বিরতি নিয়েছিল, এবং শুকনো শোকতপ্ত কণ্ঠে একটা ছড়ার দুই লাইন আবৃত্তি করেছিল, যেই ছড়াটা বারমুডায় থাকাকালীন শিখেছিল সে, বাল্যকালে। খুবই মরস্পর্শি ছড়া কেননা সেখানে এমন দুটি জাতির নাম নেওয়া হয় পৃথিবীতে যাদের আর কোন অস্তিত্ব ছিলনা। “ঐ দেখন যায় ইংলন্ড, ঐ দেখন যায় ফরছি -”
(চলবে)
*মুখোরমণ = ব্লোউ জব। এই যৌনকর্মটির যথাযথ বাংলা শব্দ মাথায় আসেনি বা খুঁজে পাইনি কোথাও। তাই শুনতে সাবেকী ধরণের হলেও নিজেই বানিয়ে নিলাম, ব্যবহারে আধুনিক হবে। কেউ যদি দেখায় যে আগে থেকেই এই শব্দ চালু বা মজুদ আছে, দাবি ছেড়ে দেব।
*ফরছি = ফরাসী = ফ্রান্স। ছড়ার অন্তমিলের সুবিধার্তে এই দশাপ্রাপ্ত।