পাঠ প্রতিক্রিয়া – উপন্যাস ডি-মাইনরের হলুদ জগতে সন্ধ্যা

d minor a novel by zillur rahman shohag

ধরা যাক, এমন এক সময় এলো, যখন একটা জনপদের ইতিহাস বলে যা কিছু ছিল সব ভুলিয়ে দেয়ার চেষ্টায় প্রায় সফল হচ্ছে ক্ষমতায় বসে থাকা লোকজন। বর্তমানকে এমনই কোনঠাসা করে রাখা হচ্ছে যে বেঁচে থাকাটাকেই এক বিশাল অর্জন বলে ধরে নিয়ে লোকজন মাথানিচু করে শুধু পার করে চলে দিনের পর দিন।

বাতাস গুমোট, বৃষ্টির জলে দুর্গন্ধ, মানুষ একে অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন। তার স্বাভাবিক জীবন যাপনের নিশ্চয়তা নেই কিন্তু স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণের অধিকারও নেই। এইরকম এক সময়ে, একদা এক রাজ্যে একজন বা একদল শিল্পীর অবস্থানটা কীরকম হবে?

জিল্লুর রহমান সোহাগ সেই একজন বা একদল শিল্পীর যে গল্প করেছেন ডি মাইনর-এ, তা এই উপন্যাসকে কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় শেষ পর্যন্ত? আমার ধারণা, আরও অনেক প্রশ্নে জর্জর এক হলুদ রঙের দুপুরে।

ডি মাইনর’র প্রধান টাইমলাইন দুটি। দেশ যখন বদলে যাচ্ছিল, সেই সময়ের আখ্যান আমরা জানতে পারি একটা রহস্যময় পান্ডুলিপি থেকে। সেটি একজন তরুণ পড়ে যেতে থাকে বর্তমানে বসে অর্থাৎ যখন দেশটা একেবারে বদলে গেছে।

পান্ডুলিপির রচয়িতা ও পাঠক, দুজনেই শিল্পী। ওরা গান গায়। প্রথমজনার যাবতীয় কর্ম অতীত হয়ে গেছে, যা শুধু কন্ঠস্বর, আর দ্বিতীয়জন বর্তমানে সক্রিয়। বদলে যেতে থাকা সময়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সেই শিল্পীর দল কী কী করেছিল? আর যে পান্ডুলিপিটা পড়ছে, সেই বা এসব জেনে কী করবে? নিজের বর্তমান যাপনকে করবে প্রশ্নবিদ্ধ? নাকি বেছে নেবে বিপ্লব? নাকি কিছুই করবে না?

পড়তে পড়তে মনে হয়েছে এ এক পেজ টার্নার। একেবারে বুলেট ট্রেনের গতিতে আমি পাতার পর পাতা উল্টে গেছি।

সম্পাদনাজনিত কিছু ত্রুটি আমার চোখ এড়াতে পারেনি, বারবার মনে হয়েছে আরও কিছু সময় সম্পাদকের টেবিলে এ কাটাতেই পারত। কখনও কখনও লেখকের কন্ঠস্বর অধিক উচ্চকিত হয়ে উঠেছে চরিত্রগুলোকে ছাপিয়ে। কিছু কিছু চরিত্রের আরও জীবন্ত হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও ছিল। প্লটের যে স্বাভাবিক নাটকীয়তার দাবি, সেই প্রলোভন থেকেও লেখক যে শতভাগ উৎরে গেছেন, তা বলবো না।

কিন্তু সমস্ত কিছু পার করেই ডি মাইনরের বড় দুটি সফলতার একটি হল, এর কল্পবিশ্বে উৎপাদিত প্রশ্নগুলোতে পাঠক হিসেবে আমি নিজেও জর্জরিত হয়ে গেছি। যে কোন পাঠকেরই হওয়ার কথা। দ্বিতীয় সফলতা হচ্ছে নিরেট একটা আখ্যান দাঁড় করাতে পারা, যার মাঝখান দিয়ে যেন বা জানালার কাঁচের একধারে দাঁড়িয়ে দেখে নেয়া যায় এক ভয়ানক ডিস্টোপিয়াকে।

বাংলা উপন্যাসের বাঁকবদল হচ্ছে। সেই বদলের এক উল্লেখযোগ্য নাম হয়ে থাকতে পারে এই উপন্যাস।

মন্তব্য জানাতে আপনার সোশাল মিডিয়া একাউন্ট অথবা ইমেইল ব্যবহার করুন