মিডনাইট ম্যাস – মাইক ফ্লানাগানের ভৌতিক পৃথিবীর ধর্মদর্শন

নেটফ্লিক্স মিনিসিরিজ মিডনাইট ম্যাস দেখলাম এক সপ্তাহ লাগাইয়া। সাত এপিসোড সাত দিন। ধর্মতত্ত্ব, নাস্তিকতা, এবসার্ডিজম, অপরাধবোধ ও অমরত্ব নিয়া মাইক ফ্লানাগানের এই মিনি সিরিজ ভালো একটা অবস্থান তুলে ধরতে পেরেছে মনে হয়।

মূল চরিত্রদের দুইজন এরিন আর রাইলির একটা আলাপ আছে মৃত্যুর পর কী হবে। এই আলাপে দুইজনই বলে তাদের দেখা সুন্দর দুইটা স্বপ্নের কথা। এরিন যেইখানে বলে যে সে মৃত্যুর পর তার সুন্দর স্বপ্নের মাঝে জাইগা উঠতে চায়। জীবন ও ধর্মের প্রতি রাইলির আস্থা উইঠা গেলেও দেখা যায় তারও এক রিকারিং ড্রিম আছে। আর সেই স্বপ্নে আছে একটা মিসিং পিস। মৃত্যুর পর হয়ত সেই মিসিং পিস মিলে যাবে। কিংবা কিছুই হবে না, থাকবে শুধু অপার শূন্যতা, যা অন্তত তার অর্থহীন জীবনের চাইতে সুন্দর কিছুই হবে।

আর আছেন ফাদার মনসিনিওর প্রুইট৷ অগাধ ধর্মবিশ্বাস তার। কিন্তু প্রতিনিয়ত গড কেমনে মানুষরে ট্রিট করেন, ও মানুষ গডরে কীভাবে ট্রিট করবে, এই নিয়া তার অভিযাত্রা অনেক অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয়।

সিরিজের শেষে ফ্লানাগান এক সম্ভাব্য উত্তরের সামনে আমাদের দাঁড় করাইয়া দেন। মানে তার নিজের কাছে যেই উত্তরটা যথাযথ, তা দর্শকদের সাথে শেয়ার করেন। যা মূলত আমরা সহজে নিজেদের করতে চাইনা, সেইরকম আরও কিছু প্রশ্নের দিকে আমাদের আগ্রহ জাগাইয়া দিতে পারে।

তুমুল ক্রিশ্চানিটি, অলৌকিকতা, আর এবসার্ডিজমের এক জগতে ফ্লানাগান ডিল করছেন এক মুসলিম চরিত্র নিয়াও। ক্রিশ্চানিটির ফ্যানাটিজমের মধ্যে দাড়াইয়া যেই লোক দেখে তার নিজের সন্তানও ক্রিশ্চানিটির দিকে ঝুকতেছে, কেননা সে অলৌকিক ঘটনা চাক্ষুষ করতেছে। যেই শেরিফ হাসান মুসলিম হিসাবে বিলিভ করে, গড বা আল্লাহ এইরাম সরাসরি অলৌকিক পন্থায় কাজ করেন না। নাইন ইলেভেনের পর এমনকি গুড আমেরিকান হইয়াও সেইদেশের মুসলিমরা কিরকম কোনঠাসা হইয়া বেচে থাকতেছিলো, সেই দিক নিয়াও নিদারুণ এক স্টেটমেন্ট হাসানের মাধ্যমে তিনি হাজির করেন।

সিনেমার ধরণে আসি। এইটা একটা হরর ড্রামা। মাইক ফ্লানাগানের কাজ অনেক আগে থেকেই আমি ফলো করতেছি। এই রেয়ার ব্রিড পরিচালক তার ভৌতিক সিনেমা দিয়া শুধু ভয় দেখাইতে চান না।

লম্বা সময় ধরেই উনি দাম্পত্য সম্পর্ক, পারিবারিক মূল্যবোধ, মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন, ডমেস্টিক ভায়োলেন্সের মত ইস্যুগুলো ডিল করতেছিলেন।

মিডনাইট ম্যাস সম্ভবত এখন পর্যন্ত তার সেরা কাজ। যেইখানে উনি মানব সমাজের সবচেয়ে বড় উপাদানগুলোর দুইটা, ধর্ম ও অস্তিত্ব নিয়া থটপ্রভোকিং একটা আলাপ করতে পারলেন।

স্টিফেন কিং লম্বা সময় ধরে যেই কাজটা লিটারেচারে করে আসতেছেন, এবং পাঠককে সাথে নিয়াই হরর নামের জিনিসটাকে সিরিয়াস লিটারেচারে সমকক্ষ করে তুলতে পেরেছেন, সিনেমার ক্ষেত্রে মাইক ফ্লানাগান তার যোগ্য উত্তরসূরিই হয়ে উঠতেছেন দিনের পর দিন।


বিঃ দ্রঃ স্লো বার্নার। ধীরে ধীরে চরিত্র ও কাহিনী ডেভেলপ করে। সে কারণেই সবার জন্য রেকমেন্ডেড না মনে হয়। 

মন্তব্য জানাতে আপনার সোশাল মিডিয়া একাউন্ট অথবা ইমেইল ব্যবহার করুন