বুকোওস্কি কেন চেষ্টা করার বিপক্ষে ছিলেন

বুকোওস্কিকে নিয়ে সিনেমা

লেখক হতে চাওয়া এক যুবকের গল্প বলে ফ্যাকটোটাম।

শব্দটার মানেই হল জীবিকার জন্য যে সব ধরণের কাজ করে।

যুবকটির নাম হ্যাংক চেইনস্কি। হ্যাংক নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে কোন কাজই করতে পারেনা। ইচ্ছেটা কি? লেখক হয়ে ওঠা।

কিন্তু লিখতে হলে ব্রেড আর ওয়াইন দরকার, প্রচন্ড মদ্যপ হিসেবে মূলত মদই দরকার।

টাকা কামাই করবার জন্য বাধ্য হয়ে তাকে বরফ কল, আচার ফ্যাক্টরি, সাইকেল ভাঙাড়ির দোকান এইসব যায়গায় কাজে লেগে থাকতে দেখা যায়।

কোন কাজই তার ভাল লাগেনা এবং নিয়মিত ছাঁটাইয়ের ব্যাপারটা নিত্য হয়ে ওঠে।

নারী আসে, নারী যায়। আশ্রয় থাকেনা কোন। বাবা ঘর থেকে বের করে দেয় অযোগ্য পুত্র হিসেবে। রাস্তার পাশে, এর তার ঘরে দিন কাটে। তবু কোন কিছুতেই স্থির হয়ে ওঠাটা অসম্ভব লাগে তার।

এক ধরণের বোহেমিয়ান জীবন পার করতে থাকা হ্যাংক একটা বারে স্ট্রিপটিজ দেখতে দেখতে আবিষ্কার করে, নিজের একমাত্র ইচ্ছের পিছনে সে কতই না নিবিঢ়ভাবে লেগে আছে, আর জীবন কেমন ধীরে ধীরে তাকে নিঃসঙ্গ সহায়হীন করে তুলেছে দিনের পর দিন।

আমেরিকান কথাশিল্পী চার্লস বুকোওস্কির একই নামের আত্মজৈবনিক উপন্যাস থেকে তৈরি হয়েছে সিনেমাটি।

উপন্যাস বা সিনেমার নায়ক হ্যাংক চেইনস্কি আসলে বুকোওস্কির অল্টার ইগো।

প্রতিষ্ঠিত লেখক হয়ে যাওয়ার পর বুকোওস্কি কোনদিন তার দরিদ্র ও নিঃসঙ্গ জীবনের কথা ভোলেননি। ছোটখাটো ম্যাগাজিনগুলোতেও লিখে গিয়েছিলেন শেষ বয়স পর্যন্ত।

তার উপন্যাস আর কবিতা জুড়ে ছিল দারিদ্র্যের সঙ্গে ফাইট দিতে থাকা লোকজনেরা, ঝকঝকে আমেরিকান ড্রিমের আড়ালে ঢাকা পড়া এক বিষণ্ণ জীর্ণ মার্কিন জীবন।

লেখক হিসেবে বুকোওস্কির যখন সূচনা, সেখানেই সিনেমাটি শেষ হয়।

এপিলোগ হিসেবে আমরা দেখি ছবি জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বুকোওস্কির নিজের লেখা এই কবিতা –

If you’re going to try, go all the way.

Otherwise, don’t even start.

This could mean not eating for three or four days.

It could mean freezing on a park bench.

It could mean jail.

It could mean derision.

It could mean mockery — isolation.

Isolation is a gift.

All the others are a test of your endurance, of how much you really want to do it.

জোর করে নিজের ইচ্ছেকে জিতিয়ে দেওয়া যায়না। ইচ্ছের জোর থাকলে সে এমনিই জিতে যেতে পারে।

বুকোওস্কির কবর ফলকে একটা কথা লেখা আছে। ডোন্ট ট্রাই। কেন? কারণ নিজের জীবন থেকে তিনি বুঝেছিলেন, গো অল দা ওয়ে মানে সেই কাজটা করে ফেলা, চেষ্টা করা নয়।

যে পথে নিশ্চয়তার অভাব, যে পথ কেউ চেনেওনা, সেই পথে হাঁটবার সিদ্ধান্ত নিলে থেকে যায় সব হারানোর ঝুঁকি।

তবু আমাদের কেউ কেউ সেই পথে হাঁটে। যারা হাঁটে তারা মানুষ হয়েও বিচিত্র কিছু।

পাদটিকা:

Factotum ২০০৫ সালে নির্মিত ফ্রেঞ্চ-নরওয়েজিয়ান সিনেমা। পরিচালক বেন্ট হ্যামার।

পরিচালনায় আর্ট ফিল্মিশ আবহ না থাকাটা একে প্রাণবন্ত করেছে। সঙ্গে ছিল ম্যাট ডিলনের দারুণ অভিনয় ও ক্রিস্টিন অ্যাবিয়র্নসেনের আবহসঙ্গীত।

বুকোওস্কিকে নিয়ে আরও একটি চমৎকার ছবি Barfly (1987)। এখানে হ্যাংকের চরিত্রে উদ্ভট আর জীবন্ত অভিনয় করেছিলেন মিকি রোর্ক।

মন্তব্য জানাতে আপনার সোশাল মিডিয়া একাউন্ট অথবা ইমেইল ব্যবহার করুন