বুনো হাস শিকার – সাহিত্যে নোবেল, কিছু অনুমান, আলাপ এবং অন্যান্য

vladimir sorokin in bengali

বুনো হাস শিকার যদিও কঠিন কিছু না। কিন্তু Wild goose chase মানে হচ্ছে এমন কিছু খোঁজা যা আসলে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তো, এই লেখাটা নোবেল সাহিত্য পুরষ্কার নিয়ে হলেও এই শিরোনামের সাথে যোগ করে আমি আগামীতে আরও হাবিজাবি লিখব আশা করি।

সুইডিশ কমিটি এই বছর আমেরিকান পলিটিক্স দ্বারা প্রভাবিত হলে, আমার ধারণা ২০২২ সালে সাহিত্য নোবেল জিততে চলেছেন রাশান উপন্যাসিক ভ্লাদিমির সোরোকিন। কেন ওনার নাম নিলাম, আগ্রহীরা খোঁজ খবর করতে পারেন।

ওলগা তোকারচুক নোবেল পাওয়ার আগে আমি তাকে প্রেডিক্ট করেছিলাম। আমার পুরনো ফেসবুক বন্ধু যারা আছেন, তাদের মনে থাকতে পারে।

শুধু সাহিত্যিক মেরিটের কারণে তার নাম নিয়েছিলাম এমন না, আবার এটা ব্লাইন্ড গেসও ছিল না।

তোকারচুক তখন নিজ দেখের অন্যতম প্রভাবশালী লেখক। এবং ঐ সময় সরকারি বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের তোপের মুখে ছিলেন। পোল্যান্ড থেকে তার নাগরিকত্ব যেন বাতিল করে দেওয়া হয় অমন আন্দোলনও চালিয়েছিল সরকারপন্থি কিছু সংগঠন।

মানে সরকারের প্রকাশ্য শত্রু হিসেবে চিহ্নিত অবস্থা ছিল তার। খাঁটি পোলিশ নন, নাস্তিক, পরিবেশবাদী সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে জড়িত – এইরকম সব অভিযোগ।

তার এক্টিভিজমকে শক্তিশালী মনে হয়েছিল। সাথে তখন মিটু মুভমেন্টের যুগ। সাহিত্যিক জগতে উনি তখনও একজন বড় মাপের ফেমিনিস্ট ছিলেন। এসবের সাথে সাহিত্যিক মেরিট হিসেব করে লাসলো ক্রাসনাহরকাইয়ের নাম করেছিলাম আমি।

যতদূর মনে পড়ে, ওরহান পামুকের নোবেল জয়ের সময়টাতেও তুরষ্কে রাজনৈতিকভাবে তার অবস্থা প্রায় তোকারচুকের মতই ছিল।

নোবেল অধিকাংশ সময়েই রাজনৈতিক একটা ঘটনা। খুব বড় মাপের লেখকেরাই নোবেল পান, এইটা আমার মনে হয় না। বরং, সাহিত্যে নোবেল পাওয়া কেউ কেউ থাকেন বড় লেখক।

এটার্নাল নোবেল ফেবারিটরা তাই ভক্তদের চোখের সামনে আয়ুরেখা ধরে ঝুলে থাকেন। পারির কাফেতে বসে থেকে থেকে অস্তিত্বের অসহনীয় লঘুতায় অদৃশ্য হয়ে যান কুণ্ডেরা, মুরাকামি দৌড়াতে থাকেন, দৌড়াতেই থাকেন, ক্রাসনাহরকাই খেপাটে দুপুরে জ্বরে আক্রান্ত এক ট্রেনে উঠে আর কোন স্টেশনে নামতে পারেন না, আরব সাগরের তীরে বালুকাবেলায় পা ছড়িয়ে বসে আদুনিস অপেক্ষা করেন আরও একটি শতাব্দীর জন্য।

শোনা যাচ্ছে এ বছর নাকি রুশদির বছর। মৃত্যুর মুখ থেকে আর কতবারই বা মানুষ ফিরে আসে?

আমাদের মনে আশা জেগে থাকে, প্রিয় লেখকদের কেউ পেলে বড় ভালো লাগবে এমন আমাদের মনে হয়।

নোবেল পুরষ্কার নিয়ে অনুমান এক ধরণের ছেলেখেলা। খেলতে আনন্দ লাগে। এ ছাড়া আর কী। জীবন বোর্হেসের সেই বুক অব স্যান্ড ছাড়া আর কিছু তো নয়, অজান্তে কোনদিন আঙুলের ফাঁক গলে সবটুকু ঝরে যাবে।

সংযুক্তি: ২০২২ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরষ্কার পেয়েছেন ফরাসী লেখক অ্যানি আর্নো।

এই লেখিকাকে (Annie Ernaux) নিয়ে আমার পূর্ব ধারণা ছিল না। প্রায় আব্দুলরাজাক গুর্নাহ যেমন আমাদের রেডারের বাইরে ছিলেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানলাম আর্নোর বইগুলো পশ্চিমে, বিশেষ করে আমেরিকায় বেশ পাঠকপ্রিয়। তার সাহিত্য সম্পর্কে ধারণা নেয়ার জন্য ছোটখাট একটা বই পড়তে শুরু করেছিলাম আমি। সে বিষয়ক একটি নোট এ লেখায় যুক্ত করে দিচ্ছি।

দি পজেশন নামে অ্যানি আর্নোর একটা বড় গল্প আছে, বইয়ের আকার, তাই নভেলা বলা যেতে পারে। ঘটনাসূত্রে বইটা ধার করার সুযোগ হয়েছে দিন কয়েক আগে।

এর কাহিনী শুরু হইছে এক নারীর কণ্ঠে, এবং উনি স্মৃতিচারণ করতেছেন, এক সময় ভোরে তার ঘুম ভাঙত – তার হাতে ধরা থাকত এক লোকের শিশ্ন। আজ আর সেই লোক তার সাথে থাকেন না, অন্য কোন নারীর সাথে থাকেন, সেই নারীরও নিশ্চয় সকালে ঘুম ভাঙে ঐ লোকের শিশ্ন হাতে নিয়ে।

একেবারে আটপৌরে ভাষা, কিন্তু কোন ভান নেই, অকপট বা সৎ বলে মনে হয়। স্মৃতি ও প্রাক্তন বিরহের যৌনতার অনুভূতিরে একটা ছোট বাক্যে তিনি ব্লেন্ড করেছেন – এইটা এক ধরণের দক্ষতা।

কোনটা বেশি যন্ত্রণাদায়ক? একদিন এক লোকের সঙ্গে জীবন কাটত, এখন সেই লোকের যৌনাঙ্গের অধিকার অন্য আরেক নারীর – এই অধিকার হারানোর দুঃখ বড় নাকি স্মৃতিচারণের বিষণ্ণতা বড়?

দেখা যায় যে ঐ দুটি দুঃখের চাইতে এ বইয়ের নায়িকা বেশি ভেঙে পড়ছে ঈর্ষায়। রাগ যতটা না সেই হারিয়ে যাওয়া পুরুষের প্রতি, তারচেয়ে বেশি ক্ষোভ সেই নারীর প্রতি যে এক সময় তার দখলে থাকা একটা পুরুষাঙ্গের নতুন মালকিন।

এইরকম গল্প-কাহিনী আমাদের সমাজে বাস্তব ও বইপত্রে যথেষ্ট পরিমাণেই আছে। অ্যানির দি পজেশন আমার ধারণা আলাদা হতে পারছে তার ভিন্ন ট্রিটমেন্টের জন্য।

মানে একজন মহিলা নিজেরে পেট্রোনাইজ করতে তার হারানো প্রেমের স্মৃতি লিখছেন না, তিনি আসলেই নিজের অকপট মনোভাব লিখতে পারছেন। অর্থাৎ জিনিসটা দোষারোপের মনলগ হয়ে ওঠে নাই।

আমাদের দেশে শুধু না, অনেক দেশেই নারীবাদী অধিকাংশ লেখকেরা অকপট হতে গিয়েও আত্মপক্ষের বেশি আর কিছু সমর্থন করতে পারেন না। অ্যানিকে অন্তত এই বইয়ে সেদিক থেকে আলাদা মনে হচ্ছে।

মন্তব্য জানাতে আপনার সোশাল মিডিয়া একাউন্ট অথবা ইমেইল ব্যবহার করুন